নদীতীরে নিশিযাপন

অফিসের কাজে কটাদিন বেশ ব্যস্ত ছিলাম, তাই ঘুরতে যেতে পারিনি। জানুয়ারিতে কাজের চাপ কমতেই ঠিক করলাম কোথাও বেড়াতে যাব। ছেলের আবার পরীক্ষা চলছে, তাই বড় জোর একরাত কাটিয়ে ফিরে আসতে হবে। থাকতে হবে কলকাতা থেকে ৫০ কিলোমিটার রেডিয়াসে। খুব দূরে যাওয়া যাবে না। হোম মিনিস্টারের শর্ত বলে কথা, পূরণ তো করতেই হবে। কিন্তু এতো কাছে নতুন জায়গা পাই কোথায়?
জয় গুগলবাবা বলে খোজ শুরু করলাম, পেয়েও গেলাম। জায়গাটার নাম বাহিরকুঞ্জ, চেনেন? এটা মোটামুটি বিড়লাপুর আর বুরুলের মাঝামাঝি। পরিধি বাড়িয়ে আরো ভালো করে বললে, বজবজ আর ডায়মন্ড হারবারের মাঝামাঝি, এক্কেবারে গঙ্গার পাড়ে।
কলকাতা থেকে দূরত্ব: ৫৪ কিলোমিটার
নিকটবর্তী রেলওয়ে স্টেশন: বজবজ রেলওয়ে স্টেশন
বারোই জানুয়ারী সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে বেরিয়ে পড়লাম বাহিরকুঞ্জের উদ্দেশ্যে। জায়গাটার নাম আমি আগে শুনিনি। তাই মনে একটু শঙ্কা ছিল। বেহালা হয়ে জোকার খালের পাশ দিয়ে গাড়ি এগাতে লাগলাম বিবিরহাটের দিকে। এইদিকটা আগে আমার আসা হয়নি, গুগল বাবা থাকতে চিন্তা কিসের। ঠিক পৌঁছে যাবো। এই রাস্তা খুব একটা চওড়া না হলেও, কন্ডিশন বেশ ভালো। গাড়ি চালাতে খুব একটা অসুবিধা হয় না। ডোঙ্গারিয়া চৌরাস্তা পেরিয়ে রায়পুর বাজারের রাস্তা বেশ সংকীর্ণ, প্রথমে মনে হবে এখন দিয়ে কি গাড়ি যেতে পারবে? মানে ঠিক এমনই মনে হচ্ছিল, কিন্তু সেইসময়েই উল্টোদিক থেকে একটা লরি বেরোতে দেখে আমার সব কুভাবনার নিরসন হল।

রায়পুর বাজারের পর থেকে বাহিরকুঞ্জের রাস্তাটা দারুন সুন্দর। ভাগীরথীর পার ধরে একে বেঁকে গেছে। ছোট বড় নৌকো ছড়িয়ে ছিটিয়ে চলেছে, কেউ মাছ ধরছে আবার কেউ মাটি তুলছে। বাহিরকুঞ্জের নাম আমার কাছে অজানা হলেও, গঙ্গার তীর ঘেঁষা আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে বুঝলাম, অনেকের কাছেই সপ্তাহান্তের পিকনিক স্পট হিসেবে জায়গাটা বেশ পরিচিত।
কোথায় থাকবেন: নদী তীরে রিসর্ট, এছাড়াও গঙ্গার ধরে বেশ কিছু পিকনিক স্পট আছে
যোগাযোগ: সরাসরি ফোন করুন ৭৯৮০৮০১৩১৭
গঙ্গার পাড় ধরে কয়েক কিলোমিটার গিয়ে পৌছলাম নদী তীরে। আরে মশাই রিসোর্টের নাম নদী তীরে। এক্কেবারে ব্র্যান্ড নিউ আয়োজন। আমরা যখন পৌঁছলাম, তখন অলরেডি এক পিকনিক পার্টি ওখানে পৌঁছে গেছে। তাই আমরা নদীর একেবারে সামনের কটেজ ছেড়ে উঠলাম তিনতলার গঙ্গামুখী ঘরে। ঘরের সামনেই বড় বারান্দা, ঘর হোক বা বারান্দা, যেখানেই থাকুন, ১০ মিনিট বাদে বাদে পেল্লাই জাহাজরা সাইরেন বাজিয়ে আপনাকে অভিনন্দন জানিয়ে যাবে।

ঘরগুলোও বেশ বড় আর আধুনিক মানে সাজানো গোছানো। টি-মেকার, মিনি ফ্রিজ থেকে সোফা অথবা কিং-সাইজ বেড, রিলাক্স করার সব উপাদান এই ঘরে পাওয়া যাবে। তার ওপর দোতলাতে আছে এক বিরাট ছাদ, পরন্ত বিকেলে ছাদে বসে পেয়ালায় তুফান তুলতে মন্দ লাগে না।
আগের দিন রাত জেগে কাজ করে একটু ক্লান্ত ছিলাম, তাই দুপুরে লাঞ্চ করে একটু গড়াগড়ি দিয়ে নিলাম। সাড়ে চারটে নাগাদ ঘুম ভাঙল, ততক্ষণে পিকনিক পার্টিও চলে গেছে। ব্যাস, ছেলেদের হাত ধরে সোজা গঙ্গার পাড়ে। ৫টা বাজতেই গোটা বাহিরকুঞ্জ ফাঁকা। পর্যটক বলতে শুধু আমরা। এই ব্যাপারটাই দারুন লাগে। নির্জন নিশুতি রাতে গঙ্গার পাড়ের মৃদুমন্দ হাওয়ায় দোলনা চড়তে চড়তে আনমনা হতেই তো এখানে আসা।

তারপর আর কি রাতে ডিনার সেরে দে ঘুম। তারপর বেশ ভোরে উঠে গঙ্গার পাড়ে বেশ কিছুক্ষন পায়চারি করলাম, মনটা ভরে গেলো। তারপর ব্রেকফাস্ট সেরে বাড়ির পথে। আবার কাজ আর কাজ।
যদি ইচ্ছে হয় তবে সপ্তাহান্তে টুক করে একদিন ঘুরে আসতেই পারেন বাহিরকুঞ্জ। ভালো লাগবে, কথা দিলাম।

কিভাবে যাবেন?
জোকা ক্যানাল রোড ধরে, বিবিরহাট হয়ে রায়পুর বাজার হয়ে বাহিরকুঞ্জ অথবা বজবজ-বিড়লাপুর হয়ে রায়পুর বাজার হয়েও যাওয়া যায় বাহিরকুঞ্জ হাট।
বাসব বন্দ্যোপাধ্যায়
হাতের কাছে এমন সুন্দর জায়গাটির ছবিসহ সুন্দর বিবরনের জন্য ধন্যবাদ আপনার অবশ্যই প্রাপ্য। যাবার জন্য ৭৩ বছর বয়সী মনে ছটফটানী শুরু হচ্ছে। কবে যাব কিংবা অদৌ যেতে পারব কিনা জানিনা। তবে যদি সম্ভ হয় তখন আপনর কথা অবশ্যই মনে পড়বে।
সুজয় ঘটক
বয়স সংখ্যামাত্র … ইচ্ছেটাই আসল, ঘুরে আসুন ভালো লাগবে।
কমল চৌধুরী
বাহিরকুঞ্জ আমার বাড়ি থেকে 15 কিমি । পাশ দিয়ে কতবার ই না গেছি । যাওয়া হয়নি শুধু বাহীরকুঞ্জ । এবার একদিন শীত শেষ হওয়ার আগে উঠে পড়ব আমার দু চাকার রথে । তবে আমাকে মনে হয় রাত কাটাতে হবে না । ওখানে রিসর্টে নিশ্চই খাবার পাওয়া যাবে এই আশা রাখি ।
সংযুক্তা ঘোষ
খুব ভালো লাগল।
ওখানে রাতে থাকবার ব্যবস্থা আছে?
সুজয় ঘটক
হ্যাঁ, থাকার ব্যবস্থা আছে। আমরা রাতে ছিলাম সপরিবারে।